কুরবানির ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

কুরবানির ইতিহাস 

আল্লাহ তায়ালা কুরবানির বিধান পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকেই চালু রেখেছেন। তবে বর্তমান আমরা যে, কুরবানি করে থাকি তা পুরোই আলাদা। ইখলাস ও মুত্তাকির সাথে। ইব্রাহিম আঃ আপন সন্তান ইসমাইল আঃ কে
কুরবানি করতে প্রস্তুত ছিলেন ইখলাস ও খোদাভীতি ও ইসকে মাওলার করণে।তারই সৃতি স্বরূপ আমাদের উপর ওয়াজীব করেছেন। যার
ইতিহাস বয়ান করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন! অর্থাৎ আদম (আঃ) এর দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথ ভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কুরবানি করেছিল। তখন একজনের কুরবানি কবুল হলো আর আরেকজনের টা কবুল হলো না। তাদের একজন বলল যে, আমি তোমাকে হত্যা করব-ই। অপরজন বলল যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানি কবুল করেন, আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি হাত বাড়ালেও আমি তোমাকে হত্যা করার জন্য হাত বাড়াবো না। আমি তো আল্লাহকে ভয় করি, আমি চাই য,তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বহন করে জাহান্নামী হও। আর এটা জালিমদের কর্মফল। তার পর তার প্রবৃত্তি তাকে তার ভাইকে হত্যা
করার জন্য প্ররোচিত করলো।ফলে সে
ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো।তার পরে
আল্লাহ তায়ালা দুটা কাক পাঠালেন, যে, তার ভাইকে কি ভাবে গোপন করবে তা দেখানোর জন্য মাটি খুদতে লাগলো। সে বলল হায়! আমি কি এ কাকের মতও হতে পারলাম না যাতে আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করতে
পারি? তার পর সে অনুতপ্ত হলো। সুদ্দী রঃ ইবনে আব্বাস ও ইবনে মাসউদ রাঃ সহ কতিপয় সাহাবায়ে কিরাম সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আদম আঃ এর ঔরস জাত থেকে জমজ জমজ সন্তান জন্ম নিত। আর এক গর্ভের ছেলের সাথে
আরেক গর্ভের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতেন। কারণ তখন আল্লাহর পক্ষ থেক সহোদর ভাই বোন যেহেতু বিয়ে করা নিষেধ ছিলো তাই একই জমজে বিয়ে না দিয়ে, এক জমজের ছেলে আরেক জমজের মেয়ের সাথে বিয়ে
দিতেন। সেই সূত্রে হাবীলের বোনকে কাবীল আর কাবীলের বোনকে হাবীল বিয়ে করবে বলে আদম আঃ আদেশ করলেন। কিন্তু যেহেতু কাবীলের জমজ বোন খুব সুন্দরী ছিলেন আর হাবীলের বোন খুব কুশ্রী ছিলেন তাই কাবীল এমন মতে রাজী হল না, তার কথা ছিলো যে, তার সেই সুন্দরী বোনকেই সে বিয়ে করবে, হাবীলের জমজকে বিয়ে করবে না। তাই হযরত আদম আঃ তাদের দুজনকে কুরবানী করতে বললেন,যে যার কুরবানি কবুল হবে সেই কাবীলের বোন কে বিয়ে করবে। একথা বলে তিনি চলে গেলেন কাবার পথে। হাবীলের ছিল গরু দুম্বার পাল তাই সে একটা গরু কুরবানির জন্য পেশ করলো আর কাবীলের ছিলো সকল প্রকারের শস্যাদি তাই সে নিজের শস্যাদিকে কুরবানির জন্য সামনে পেশ করল। হঠাই আসমান থেকে আগুন এসে হাবীলের কুরবানীকে কবুল হওয়ার নামে পুড়ে গেলো আর কাবীলের কুরবানি পুরলো না অর্থাৎ কবুল হলো না।তাই দেখে কাবীল ক্রদ্ধ হয়ে বলল আমি তোমাকে হত্যা করবো। একথা শুনে হাবীল বলল যে, তুমি আমার দিকে হত্যার হাত বাড়ালেও আমি বাড়াবো না। যাই হোক কাবীল স্বভ্রাতাকে হত্যা করলো। এখন সেই লাশ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, এদিকে সে অনুতপ্তও হচ্ছে। আল্লামা ইবনে কাসির রঃ বলেন যে, কেউ কেউ মত ব্যাক্ত করছেন হাবীলের লাশ কাবীল এক বসর তার কাধে করে বহন করেছে আবার কেউ কেউ মত ব্যাক্ত করছেন একশত বসর। এর পর হঠাৎ দুটা কাক এসে একটা আরেকটাকে হত্যা করে মাটিতে পুতে রাখে। এই দেখে কাবীলও আফসোস করত বলে যে, হায়! আমি কি এই কাকের মতও হতে পারলাম না যে, আমার ভাইকে মাটি খুড়ে রাখবো? আর এই কাকটাকে
আল্লাহই পাঠাইছিলেন তাকে মাটিতে দাফন করানো দেখানোর জন্য।
বন্ধুগণ ! এখানে কাবীলের কুরবানিটা কবুল হয়েছে তার মাঝে আল্লাহর ভয় ও আল্লাহর ওয়াস্তেই করছে বলে, আর হাবীলের কুরবানি কবুল হয়নি সে মন থেকে কুরবানি করে নি বলে। 

 এমনি ভাবে হযরত ইবরাহিম (আঃ) হজরত ইব্রাহীম (আ.)’র প্রতি আল্লাহর আদেশ : মহান আল্লাহ হজরত ইব্রাহীম (আ.)কে যে কয়টি বড় পরীক্ষা করেছিলেন এর মধ্যে স্বীয় পুত্র ইসমাইল (আ.)কে আল্লাহর রাহে কুরবানি করার আদেশ ছিল তাঁর জন্য
মহাপরীক্ষা। এই দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন অর্থাৎ- তিনি (হজরত
ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম) বললেন
হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার
অভিমত কি? ‘‘সে বলল (ইসমাইল) হে
আমার আব্বা! আপনি যা আদিষ্ট
হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা
করলে আমাকে আপনি ধৈর্যশীলদের
অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সুরা-আস্-
সাফফাত আয়াত-১০২)।

হজরত ইব্রাহীম (আ.) স্বীয় পুত্রের এ
সাহসিকতাপূর্ণ উত্তর পেয়ে খুবই খুশি
হলেন। তাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার
জন্য তাঁর একমাত্র পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে জবেহ করার জন্য মিনার ময়দানে নিয়ে গেলেন। জিলহজ্ব
মাসের ১০ তারিখে হজরত ইব্রাহীম
(আ.) স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল
আলাইহিস সালামকে কুরবানির জন্য
নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন অভিশপ্ত
শয়তান পিতা-পুত্রের মনে সংশয়ের
সৃষ্টি করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল তিনটি স্থানে। তারা উভয়ে শয়তানের বিতৃষ্ণায়বশয়তানের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন মিনায়। মহান আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা ও নিষ্টার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আজও হাজীরা উল্লিখিত তিনটি স্থানে পাথর নিপে করেন শয়তানের উদ্দেশ্যে।

প্রিয় পাঠক; হজরত ইব্রাহীম (আ.)
স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবেহ করার
উদ্দেশ্যে পুত্রের গলায় ছুরি চালালেন। মহান আল্লাহ তাঁর এই আত্মত্যাগে খুশি হয়ে গেলেন’ সাথে সাথে মহান আল্লাহ বললেন- অর্থাৎ তখন তাঁকে আহ্বান করে বললাম : হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে।“হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানি করলেন হজরত ইব্রাহীম (আ.), যানবেহেশ্ত থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর হুকুমে নিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকে পশু কুরবানির প্রথা চালু হয়েছে।

বন্ধগণ! আল্লাহ তায়ালা তাদের এই
ইখলাসের সাথে কৃত আমলের উপর খুশি হয়ে তা সৃতি স্বরূপ আমাদের উপর, অর্থাৎ বনি ইসমাইল তথা উম্মতে মুহাম্মাদের উপর ওয়াজীব করে দিয়েছেন। তাই আমরাও যদি তা ইখলাসের সাথে করতে পারি তাহলে আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের কুরবানিকেও কবুল করবেন। আর যদি
ইখলাস ছাড়া কুরবানি করি তাহলে কাবিলের কুরবানি যেমন কবুল হয় নি তেমনি আমাদেরও কুরবানি কবুল হবে না। আর আমাদের কুরবানি কবুল না হলে।আমরাও কাবিলের মত অনুতপ্ত হব। তাই আমরা নিয়তকে আগে খালেস করবো তার পর আমল করবো ইনশাআল্লাহ। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্ট একটি শিশু জ্বলন্ত চুলার ভিতরে গিয়ে জ্বলন্ত কয়লা হাতে তুলে মুখে নেওয়ার সাথে সাথেই‌‌‍ স্বর্ণের টুকরায় পরিণত হলো।