ফতোয়া, কাযা, হদ ও তা’যীর: পরিচিতি ও কিছু মৌলিক বিধান

পথের সন্ধানে

ফতয়া, কাযা, হদ ও তা’যীর: পরিচিতি ও কিছু মৌলিক বিধান 

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক


ওলামায়ে কিরামের পক্ষ হতে গত ৫ জুন ’১০ঈ. তারিখে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপ লাউঞ্জে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ফতোয়া ও মানবাধিকার।
  • বর্তমান প্রবন্ধটি ঐ সেমিনারে পঠিত হয়েছে। প্রবন্ধকারের নযরে ছানীর পর এখন তা আলকাউসারের পাঠকবৃন্দের জন্যপ্র কাশ করা হচ্ছে। এখানে বলে দেওয়া আবশ্যক যে, ফতোয়ার পরিচিতি বিষয়ে

এটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ নয়, সেমিনারে পাঠের জন্য স্বল্পতম সময়ে আলোচ্য বিষয়ের মৌলিক ও অতিপ্রয়োজনীয় কথাগুলো দলীল-প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিসহ পেশ করে দেওয়াই ছিল লেখাটির উদ্দেশ্য। -সম্পাদক

 ভূমিকা:

কোনো অসামাজিক কার্যকলাপের কারণে শালিস বা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে শাস্তিদানের কোনো ঘটনা দেশের কোথাও ঘটলে একে কেন্দ্র করে ফতোয়া-বিরোধী যে অপপ্রচার শুরু হয় তা প্রমাণ করে যে, ফতোয়ার স্বরূপ, ব্যাপকতা ও গুরুত্ব; কাযা ও ফতোয়ার পার্থক্য এবং হদ-তা’যীর ও তা কার্যকর করার বিষয়ে শরীয়তের যেসব মৌলিক বিধিবিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের সমাজে অজ্ঞতা ও উদাসীনতা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। এজন্য ফতোয়া, কাযা, হদ ও তা’যীরের পরিচিতি এবং এ সংক্রান্ত মৌলিক বিধিবিধান সম্পর্কে দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করা সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি। বর্তমান প্রবন্ধে বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণিক আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা সহজ করুন এবং কবুল ও মাকবুল করুন। ফতোয়ার স্বরূপ ও প্রেক্ষাপট ফতোয়া আরবী শব্দ এবং কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়তের একটি মর্যাদাপূর্ণ পরিভাষা। বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে ‘ফতোয়া’ সংক্রান্ত আরো কিছু শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া আবশ্যক। যথা : ইস্তিফতা, মুসতাফতী, মুফতী, ইফতা ও দারুল ইফতা। কুরআন-সুন্নাহ ও দ্বীনী ইলমের মাহির আলিমের নিকট কোনো দ্বীনী বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান জিজ্ঞাসা করাকে ‘ইস্তিফতা’ বলে। প্রশ্নকারীকে ‘মুস্তাফতী’ বা ‘সাইল’ বলে। বিশেষজ্ঞ আলিম শরীয়তের দলীলের আলোকে যে বিধান বর্ণনা করেন তাকে ‘ফতোয়া’ বলে। বিধান বর্ণনাকারী আলিমকে মুফতী এবং তার এই কাজ অর্থাৎ প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে শরীয়তের বিধান বর্ণনা করাকে ‘ইফতা’ বলে। যে প্রতিষ্ঠান এই দায়িত্ব পালন করে তাকে ‘দারুল ইফতা’ বলে। নিম্নে একটি ছকের
মাধ্যমে এই শব্দগুলির অর্থ তুলে ধরা হল :

ক্রমিক নং শব্দ অর্থ

১ ﺍِﺳْﺘِﻔْﺘَﺎﺀ (ইসতিফতা) কোনো বিষয়ে ফতোয়া প্রার্থনা করা, শরীয়তের বিধান জানার জন্য সমস্যা উত্থাপন।                  করা, উত্থাপিত প্রশ্ন বা প্রশ্নপত্র
২ ﻣُﺴْﺘَﻔْﺘِﻲ (মুস্তাফতী) প্রশ্নকারী
৩ ﺍِﺳْﺘَﻔْﺘَﻰ (ইস্তাফতা) সে ফতোয়া প্রার্থনা করল, সে মাসআলা জিজ্ঞাসা করল
৪ ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﻲ (ইয়াস্তাফতী) সে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করছে, সে মাসআলা জানতে চায়। বহুবচনে ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘُﻮْﻥَ
                (ইয়াস্তাফতূনা), ﻳﺴﺘﻔﺘﻮﻧﻚ (ইয়াস্তাফতূনাকা) তারা আপনাকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করে
৫ ﺃَﻓْﺘَﻰ/ ﺃﻓﺘﻮﺍ (আফতা) তিনি ফতোয়া দিলেন, শরীয়তের বিধান বর্ণনা করলেন, প্রশ্নের উত্তর দিলেন।
৬ ﻳُﻔْﺘِﻲ/ ﻳﻔﺘﻴﻜﻢ (ইউফ্তী) তিনি ফতোয়া দিচ্ছেন, শরীয়তের বিধান বর্ণনা করছেন।
৭ ﺇِﻓْﺘَﺎﺀ (ইফ্তাউন) ফতোয়া প্রদান করা, শরীয়তের বিধান বর্ণনা করা।
৮ ﻣُﻔْﺘِﻲ (মুফতী) ফতোয়া দানকারী ফকীহ/মাহির আলিমে দ্বীন।
৯ ﻓَﺘْﻮَﻯ/ﻓُﺘﻴﺎ (ফত্ওয়া) ইস্তিফতার উত্তরে শরীয়তের দলীলের আলোকে প্রদত্ত শরীয়তের বিধান/সমাধান।                        বহুবচনে ফাতাওয়া, ফাতাভী।
১০ ﺩَﺍﺭُ ﺍﻻِﻓْﺘَﺎﺀ (দারুল ইফ্তা) যে প্রতিষ্ঠান থেকে ফতোয়া প্রদানের দায়িত্ব পালন করা হয়।

      ‘আলফিকহুল ইসলামী’র গ্রন্থাদিতে শরীয়তের হুকুম-আহকাম ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণসহ সংকলিত হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে সরাসরি শরীয়তের দলীল (অর্থাৎ শরীয়তের হুকুম- আহকামের মৌলিক সূত্র) থেকে, কিংবা ফিকহের কিতাব থেকে হুকুম-আহকাম জানা সম্ভব নয়, আর শরীয়তও তা প্রত্যেকের উপর ফরয করেনি; বরং মানুষের সহজতার জন্য আল্লাহ তাআলা এই বিধান দান করেছেন যে, প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক অঞ্চলে কিছু মানুষ ‘তাফাককুহ ফিদদীন’ অর্থাৎ দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অর্জন করবে আর অন্যরা প্রয়োজনের মুহূর্তে তাদের নিকট থেকে শরীয়তের বিধান জেনে নিবে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এই পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন। কুরআন মজীদের সূরা তাওবা (আয়াত ১২২), সূরা নাহল (আয়াত ৪৩), সূরাতুল আম্বিয়া (আয়াত ৭) এবং আরো বিভিন্ন আয়াতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদ্রূপ বহু হাদীসেও এই নির্দেশনা বিদ্যমান রয়েছে। এটি শরীয়তের একটি ইজমায়ী ও মুতাওয়ারাছ (সর্বসম্মত ও সর্বযুগে অনুসৃত) বিধান। ইসলামের ফতোয়া- ব্যবস্থা মূলত এই বিধানেরই বাস্তবরূপ। দ্বীন ও শরীয়তের বিধান জানার জন্য তাফাককুহ ফিদ্দীন অর্জনকারী বিজ্ঞ আলেমের নিকট প্রশ্ন করাই ‘ইস্তিফতা’ বা ‘সুয়াল’। আর তার উত্তর দেওয়া হচ্ছে ‘ইফতা’। দ্বীনী প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখিত শরয়ী ফয়সালাটি ‘ফতোয়া’। ফতোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং ইসলামে ফতোয়ার মর্যাদা উপরোক্ত মৌলিক বিষয়টি জানার পর ফতোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো সংশয় থাকতে পারে না। দ্বীন ও শরীয়তের উপর যার ঈমান আছে এবং যিনি
নিজেকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর শরীয়তের অধীন বলে বিশ্বাস করেন তাকে অবশ্যই শরীয়তের হুকুম আহকাম জানতে হবে। এটি তার দ্বীনী প্রয়োজন। এই প্রয়োজন পূরণের সহজ ও সর্বযুগে অনুসৃত
উপায় হল ‘ফতোয়া।’ এখান থেকে ইসলামে ফতোয়ার মর্যাদাও অনুধাবন করা যায়। কারণ ফতোয়া কারো ব্যক্তিগত মতামতের নাম নয়; বরং তা হচ্ছে শরীয়তের দলীলসমূহে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত বা শরীয়তের দলীলসমূহ থেকে ইসতিম্বাতের নীতিমালা অনুযায়ী আহরিত শরয়ী বিধান। মোটকথা, ফতোয়া হচ্ছে ইসলামী জীবন- ব্যবস্থার অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ফতোয়া ছাড়া ইসলামী সমাজ-ব্যবস্থার চিন্তা করাও অসম্ভব। এই গুরুত্বের কারণে ফতোয়ার নীতিমালা এবং মুফতী ও মুসতাফতী উভয় শ্রেণীর জন্য অনুসরণীয় আদব কায়েদা ছাড়াও প্রাসঙ্গিক বহু বিষয় কুরআন-হাদীসে গুরুত্বের সাথে বাতলে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ফতোয়া-সংক্রান্ত শরীয়তের নীতি ও বিধিবিধানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্র উদ্ভাবিত হয়েছে, যাকে ‘উসূলুল ইফতা’ ও ‘আদাবুল ফতোয়া’ বলা হয়। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে এই শাস্ত্রেই একশ’র কাছাকাছি গ্রন্থ বিদ্যমান রয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ কয়েকটি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করছি।

১.‘আল ফতোয়া’, ইমাম ইবনু আবিদ দুন্য়া (মৃত্যু : ২৮১ হি.)।
২. ‘আদাবুল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী’, আবুল কাসিম আসসায়মারী (মৃত্যু : ৩৮৬হি.)।
৩. ‘আলফকীহ ওয়াল মুতাফাককিহ’,খতীব বাগদাদী (মৃত্যু : ৪৬৩ হি.)।
৪. ‘আদাবুল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী’,ইবনুস সালাহ (৬৪৩ হি.)।
৫. ‘আলইহকাম ফী তাময়ীযিল ফাতাওয়া আনিল আহকাম’, আবুল আব্বাস কারাফী (৬৮৪ হি.)।
৬. ‘সিফাতুল ফাতাওয়া ওয়াল মুফতী ওয়াল মুসতাফতী’, ইবনু হামদান (৬৯৫হি.)।
৭. ‘ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীন আন রাব্বিল আলামীন’, ইবনুল কাইয়্যিম (৭৫১ হি.)।
৮. ‘আদাবুল ফুতয়া’, জালালুদ্দীন সুয়ূতী (৯১১ হি.)।
৯. ‘শরহু উকূদি রাসমিল মুফতী’, ইবনে আবেদীন শামী (১২৫২ হি .)।
১০. ‘আদাবুল মুফতী’, মুফতী সাইয়্যেদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী (১৩৯৪ হি.), সাবেক খতীব, বাইতুল              মুকাররম মসজিদ ঢাকা।

‘ফতোয়া’ কুরআন মজীদে কুরআন হাকীমে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করাকে ‘ইসতিফতা’, ‘সুআল’,
সুআলু আহলিয যিকর’ ইত্যাদি শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ফতোয়া প্রদানকে কোথাও ‘ইফতা’,
কোথাও ‘ইনযার’ বলা হয়েছে। সূরা নিসায় আল্লাহ তাআলা বলেন, ﻭﻳﺴﺘﻔﺘﻮﻧﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ، ﻗﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻔﺘﻴﻜﻢ ﻓﻴﻬﻦ ... অর্থাৎ লোকেরা আপনার নিকট নারীদের (অধিকার) সম্পর্কে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে ফতোয়া (বিধান) দান করছেন। ...।’ (সূরা নিসা আয়াত : ১২৭) ঐ
সূরার শেষে বলা হয়েছে- ﻳﺴﺘﻔﺘﻮﻧﻚ، ﻗﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻔﺘﻴﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻼﻟﺔ অর্থাৎ লোকেরা আপনার নিকট ‘কালালাহ’ সম্পর্কে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ‘কালালাহ’ সম্পর্কে ফতোয়া (বিধান) দান করেছেন ...।’ (সূরা নিসা আয়াত : ১৭৬) (‘কালালা’ মীরাছের একটি বিশেষ প্রসঙ্গ। এ সংক্রান্ত শরীয়তের বিধান উপরোক্ত আয়াতের অবশিষ্ট অংশ ও তার তাফসীরে দ্রষ্টব্য।) লক্ষ্য করার বিষয় এই যে,উপরোক্ত দুই আয়াতেই ইফ্তা ও ইসতিফ্তা শব্দ দু’টি ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বীনী বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসাকে ‘ইসতিফতা’ (ফতোয়া প্রার্থনা) এবং এর জবাবে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার বিধান প্রদানকে ‘ইফতা’ বলা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে যে, শরীয়তের বিধানদাতা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলা এবং এটি তাঁরই অধিকার। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহর আদেশে ফতোয়া দান করতেন এবং তাঁর ফতোয়া ছিল অহীভিত্তিক। এরপর প্রতি যুগে ফকীহ ও মাহির আলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি হয়ে তাঁর রেখে যাওয়া মীরাছ- কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং কুরআন-সুন্নাহ্য় স্বীকৃত অন্যান্য দলীল
(যেমন, খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ, আছারে সাহাবা, ইজমায়ে উম্মত ও কিয়াসে শরয়ী ইত্যাদির) আলোকে মানুষকে ফতোয়া প্রদান করেছেন। অতএব এই দুই আয়াত থেকে একদিকে যেমন ইফতা ও ইসতিফতার বৈধতা প্রমাণ হয় তেমনি ইফতার মর্যাদা ও স্পর্শকাতরতাও প্রমাণ হয়। কারণ দ্বীনী বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া বা শরীয়তের বিধান বর্ণনা করা প্রকৃতপক্ষে শরীয়তদাতার প্রতিনিধিত্ব। এজন্য ফতোয়া দেওয়াকে ‘তাওকী আনিল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর পক্ষ হতে সাক্ষর দান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিখ্যাত
তাবেয়ী ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (১৩০ হি.) বলেন, ﺇﻥ ﺍﻟﻌﺎﻟﻢ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﻴﻦ ﺧﻠﻘﻪ ﻓﻠﻴﻨﻈﺮ ﻛﻴﻒ ﻳﺪﺧﻞ ﺑﻴﻨﻬﻢ অর্থাৎ আলিম (যিনি শরীয়তের বিধান বর্ণনা করেন) আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের মাঝে (প্রতিনিধি)। অতএব
তার চিন্তা করা উচিত, এই দায়িত্ব তিনি কীভাবে পালন করছেন।’ (আলবায়হাকী (৪৫৮ হি.) : আলমাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা পৃ. ৪৩৯; ইবনুস সালাহ : আদাবুল মুফতী পৃ. ৭-৮) ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহ. (৭৫১হি.) ইফতার উসূল ও আদাবের উপর চার খণ্ডে বৃহৎ ও প্রমাণ্য গ্রন্থ রচনা করে তার নাম রেখেছেন ‘ইলামুল মুয়াক্কিয়ীন আন রাব্বিল আলামীন’। অর্থাৎ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে সাক্ষরকারীদেরকে (এবিষয়ের উসূল ও আদাব সম্পর্কে) অবগত করা তিনি যথার্থই বলেছেন যে, ‘আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বিধান বর্ণনা করা, তা সরাসরি আয়াত বা হাদীস বর্ণনা করার দ্বারা হোক বা আয়াত-হাদীস থেকে প্রমাণিত বিধান বর্ণনা করার দ্বারা হোক, এই দায়িত্ব যিনি পালন করবেন তাঁর মাঝে ইলম ও সিদক, জ্ঞান ও সততা বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য, তাঁর কর্ম ও চরিত্র সুন্দর হতে হবে এবং জাহের ও বাতেন একরকম হতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যখন রাজা- বাদশাহর প্রতিনিধি হয়ে সাক্ষর করাও মর্যাদা ও ভয়ের বিষয় তখন রাব্বুল
আলামীনের পক্ষ হতে সাক্ষর করা কেমন মর্যাদাশালী ও স্পর্শকাতর বিষয় হবে? এজন্য এই দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিদের অপরিহার্য কর্তব্য, এই মানসিবের শান অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং মানসিবের মর্যাদা অনুধাবন করা। হক কথা প্রকাশ করতে কোনোরূপ দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আল্লাহই তার সহায়। মুফতীর চিন্তা করা উচিত, ফতোয়া দানের ক্ষেত্রে তিনি কার প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার ইয়াকীন থাকা উচিত যে, আগামীকাল তাকে আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়াতে হবে এবং এই যিম্মাদারীর বিষয়ে জবাবদিহী করতে হবে।’ (ইলামুল মুয়াক্কিয়ীন ১/৮-৯ সারসংক্ষেপ) উল্লেখ্য, ফকীহগণের
ফতোয়া মোতাবেক আমল করাকে কুরআন ও
হাদীসের পরিভাষায় ‘‘ ﺍﻃﺎﻋﺔ ﺃﻭﻟﻰ ﺍﻷﻣﺮ’’ ;
‘‘ ﺍﻗﺘﺪﺍﺀ ’’ ও ‘‘ ﺍﺗﺒﺎﻉ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻤﻨﻴﺒﻴﻦ ’’ প্রভৃতি শব্দে
ব্যক্ত করা হয়েছে। দেখুন : আবু বকর
জাসসাস (৩৭০ হি.) : আহকামুল কুরআন খ
২১৫-২১৭ (সূরাতুন নিসা, আয়াত : ৮৩)। আরো
দেখুন : কুরতুবী (৬৭১ হি.) : আলজামি’
লিআহকামিল কুরআন খ : ৫, পৃষ্ঠা : ২৫৮-২৬৩,
(সূরাতুন নিসা, আয়াত : ৫৯)। কুরতুবী রাহ.
সূরাতুন নিসার ৫৯ নং আয়াতের আলোচনায়
লেখেন- ‘‘ ﻭﻳﺪﻝ ﻫﺬﺍ ﻋﻠﻰ ﺻﺤﺔ ﻛﻮﻥ ﺳﺆﺍﻝ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ
ﻭﺍﺟﺒﺎ، ﻭﺍﻣﺘﺜﺎﻝ ﻓﺘﻮﺍﻫﻢ ﻻﺯﻣﺎ .’’ অর্থাৎ এই আয়াত
প্রমাণ করে যে, আলিমদের নিকট
মাসআলা জিজ্ঞাসা করা ফরয এবং
তাদের ফতোয়া অনুসরণ করা অপরিহার্য।
(আলজামি’ লিআহকামিল কুরআন, খ : ৫,
পৃষ্ঠা : ২৬০) সূরাতুন নিসার উপরোক্ত
আয়াতে (১২৭ নং) চিন্তা করার মতো
আরেকটি বিষয় এই যে, ফতোয়া বিষয়ক এই
আয়াতটি নারীর অধিকারের সাথে
সংশ্লিষ্ট। ইসলামের ফতোয়ার দ্বারা
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর
ভবিষ্যতেও তাদের অধিকারপ্রাপ্তি তখনই
নিশ্চিত হবে যখন ফতোয়ার সঠিক চর্চা ও
যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। যেসব
আয়াতে ‘ইসতিফতা’ বা ফতোয়া
জিজ্ঞাসা করাকে ‘সুআল’ শব্দে বলা
হয়েছে তা এই : সূরাতুল বাকারা, আয়াত :
১৮৯, ২১৫, ২১৭, ২১৯, ২২০ ও ২২২; সূরাতুল মা-
ইদা, আয়াত : ৪। কুরআন হাকীম থেকে আর
দুইটি আয়াত উল্লেখ করার পর আমরা
দেখব, হাদীস ও সুন্নাহ্য় ফতোয়া সম্পর্কে
কী বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন- ﻓﺎﺳﺌﻠﻮﺍ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﺍﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﻻ ﺗﻌﻠﻤﻮﻥ ’’ যদি
তোমাদের জানা না থাকে তাহলে আহলুয
যিকর (আলিমদের) নিকট জিজ্ঞাসা
কর।’ (সূরাতুন নাহ্ল, আয়াত : ৪৩; সূরাতুল
আম্বিয়া, আয়াত : ৭) ‘আহলুয যিকর’ দ্বারা
আলিমদেরকে বোঝানো হয়েছে। দেখুন :
খতীব বাগদাদী (৪৬৩ হি.) : আলফকীহ
ওয়াল মুতাফাককিহ, খ : ২, পৃষ্ঠা : ৬৮;
আলূসী (১২৭০) : রূহুল মাআনী, খ : ১৪, পৃষ্ঠা :
১৪৮। সূরাতুল আম্বিয়া, আয়াত : ৭-এর
আলোচনায় শায়খ আবু বকর আলজাযায়েরী
(মুদাররিস ও ওয়ায়িয, মসজিদে নববী)
‘‘আইসারুত তাফাসীর’’ (খ : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৯৮)
কিতাবে লেখেন- ‘‘ ﻭﻓﻲ ﺍﻷﻳﺔ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻮﺏِ
ﺗﻘﻠﻴﺪ ﺍﻟﻌﺎﻣﺔ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ، ﺇﺫﻫﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺬﻛﺮ، ﻭﻭﺟﻮﺏِ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻤﺎ
ﻳﻔﺘﻮﻧﻬﻢ ﺑﻪ ﻭﻳﻌﻠﻤﻮﻧﻬﻢ ﺑﻪ ’’ অর্থাৎ ‘এই আয়াত
প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষের জন্য
আলিমদের তাকলীদ করা অপরিহার্য।
কারণ আলিমরাই হচ্ছেন আহলুয যিকর।
তাদের ফতোয়া ও নির্দেশনা অনুসারে
আমল করা জরুরি।’ ‘ফতোয়া’ হাদীস ও
সুন্নাহ্য় ১. ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হলে
আলিমের উপর ফতোয়া দেওয়া ফরয আবু
হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন - ‘‘ ﻣﻦ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﻋﻠﻢ ﺛﻢ ﻛﺘﻤﻪ ﺃﻟﺠﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
ﺑﻠﺠﺎﻡ ﻣﻦ ﻧﺎﺭ ’’ অর্থাৎ যাকে ইলম (কোনো
দ্বীনী বিষয়) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা
সত্ত্বেও সে তা গোপন করে (বলে না)
তাকে কিয়ামত-দিবসে আগুনের লাগাম
পরানো হবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস :
৭৫৭১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৬৪৯;
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৬৫০; সহীহ
ইবনে হিব্বান, হাদীস : ৯৫ আবু হুরায়রা রা.
ছাড়া আরো নয়জন সাহাবীর সূত্রে
হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন : সুনানে
আবু দাউদ, টীকা); মুসনাদে আহমদ, টীকা)
কুরআন হাকীমের সূরাতুল বাকারায় (আয়াত
: ১৫৯) এই হাদীসের বক্তব্য বিদ্যমান
রয়েছে। বোঝা গেল যে, দ্বীনী ইলমের
মাহির ব্যক্তির উপর শরীয়ত এই
বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছেন যে,
দ্বীনের কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা
হলে যদি জানা থাকে তবে জানিয়ে
দেওয়া তার উপর ফরয। এই দায়িত্ব পালন
না করলে আখিরাতে তাকে কঠিন শাসি-র
মুখোমুখী হতে হবে। ২. ফতোয়া শুধু
আলিমকেই জিজ্ঞাসা করা যায়। ফতোয়া
দেওয়া একমাত্র তাদেরই অধিকার আলিম
না হয়েও কেউ যদি ফতোয়া দিতে আরম্ভ
করে তাহলে দ্বীনী বিষয়ে অরাজকতা
দেখা দিবে এবং বেদ্বীনী ও গোমরাহীর
ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। আবদুল্লাহ ইবনে
আমর রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছি- ’’ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﻘﺒﺾ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺍﻧﺘﺰﺍﻋﺎ ﻳﻨﺘﺰﻋﻪ
ﻣﻦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩ، ﻭﻟﻜﻦ ﻳﻘﺒﺾ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﺑﻘﺒﺾ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ، ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺒﻖ
ﻋﺎﻟﻤﺎ ﺍﺗﺨﺬ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺭﺅﻭﺳﺎ ﺟﻬﺎﻻ ﻓﺴﺌﻠﻮﺍ ﻓﺎﻓﺘﻮﺍ ﺑﻐﻴﺮ ﻋﻠﻢ
ﻓﻀﻠﻮﺍ ﻭﺃﺿﻠﻮﺍ . ‘‘ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻭﻛﺜﻴﺮﻭﻥ، ﻭﻟﻔﻆ
ﺃﺣﻤﺪ ﻓﻲ ﻣﺴﻨﺪﻩ ﺑﺮﻗﻢ ্ভল্ফশু্ভ : ﻓﻴﺴﻔﺘﻮﺍ ﻓﻴﻔﺘﻮﺍ ﺑﻐﻴﺮ
ﻋﻠﻢ. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বান্দাদের
মধ্য থেকে ইলম ছিনিয়ে নিবেন না। তবে
আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম
উঠিয়ে নিবেন। অতএব যখন কোনো আলিমই
অবশিষ্ট থাকবেন না তখন লোকেরা
মূর্খদেরকেই ধর্মগুরু হিসেবে গ্রহণ করবে।
ফলে তাদেরকেই ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা
হবে আর তারা ইলম ছাড়া ফতোয়া দিবে।
এভাবে নিজেও গোমরাহ হবে,
অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে।’ (সহীহ
বুখারী, হাদীস : ১০০; সহীহ মুসলিম; হাদীস :
২৬৭৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৮৯৬;
আসসুনানুল কুবরা, নাসায়ী, হাদীস : ৫৯০৮;
আলমুসান্নাফ আবদুর রাযযযাক, হাদীস :
২০৪৭১) ৩. ফতোয়া প্রদানে সতর্ক হওয়া
ফরয এবং তাহকীক ও অবগতি ছাড়া
ফতোয়া প্রদান সম্পূর্ণ হারাম হাদীসের
কিতাবে এই ঘটনা সুপ্রসিদ্ধ যে, এক
কাফেলায় একজন অসুস্থ ব্যক্তি ছিলেন।
তার শরীরে ক্ষত ছিল। ঘটনাক্রমে রাতে
তার স্বপ্নদোষ হল। তিনি সঙ্গীদের
জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তায়াম্মুম
করতে পারি? কেউ একজন বলল, না, পারেন
না। তিনি গোসল করলেন এবং এ কারণে
তার মৃত্যু হয়ে গেল। কাফেলা মদীনায়
ফিরে আসার পর রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
ঘটনাটি জানানো হল। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দুঃখিত
হলেন এবং বললেন- ﻗﺘﻠﻮﻩ، ﻗﺘﻠﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ، ﺍﻻﺳﺌﻠﻮﺍ ﺇﺫ ﻟﻢ
ﻳﻌﻠﻤﻮﺍ، ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺷﻔﺎﺀ ﺍﻟﻌﻲ ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ ’’ অর্থাৎ ‘এরাই
তাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাদের
বিনাশ করুন! তাদের যখন জানা ছিল না
তখন জিজ্ঞাসা করল না কেন? অজ্ঞতার
উপশম তো জিজ্ঞাসা।’ (সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস : ৩৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস :
৩১৮; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৩০৫৬;
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৮৬৭)
বোঝা গেল যে, যাকে মাসআলা
জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তার যদি জানা
না থাকে তাহলে তার অপরিহার্য কর্তব্য,
জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া।
ভালোভাবে না জেনে শুধু অনুমান করে
উত্তর দেওয়া মারাত্মক অপরাধ, যে
কারণে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিনভাবে ভর্ৎসনা
করেছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘‘ ﻣﻦ ﺃﻓﺘﻲ ﺑﻔﺘﻴﺎ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ
ﺛﺒﺖ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺇﺛﻤﻪ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺃﻓﺘﺎﻩ ’’ অর্থাৎ যদি কাউকে
না জেনে ফতোয়া দেওয়া হয় (এবং ভুল
সিদ্ধান- দেওয়া হয়) তো এর গুনাহ
ফতোয়াদাতাকে বহন করতে হবে। (মুসনাদে
আহমদ, হাদীস : ৮২৬৬; আলমুসতাদরাক,
হাকিম, খ ৫৭, হাদীস : ১৬১; আলআদাবুল
মুফরাদ, ইমাম বুখারী, হাদীস : ২৫৯) ইজমার
আলোকে ফতোয়া ইমাম গাযালী রাহ.
(৫০৫ হি.) লেখেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য
আলিমের নিকট মাসাইল জিজ্ঞাসা করা
এবং তা অনুসরণ করা ফরয। কারণ
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যারা আলিম
ছিলেন না তারাও আলিম সাহাবীদের
নিকট ফতোয়া জিজ্ঞাসা করতেন এবং
আলিম সাহাবীগণ ফতোয়া দিতেন। এ
বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের ইজমা ছিল,
যা তাওয়াতুরের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে
প্রমাণিত। (আলমুসতাসফা, খ : ২, পৃষ্ঠা :
৩৮৯) ইমাম সাইফুদ্দীন আমিদী (৬২১ হি.)
লেখেন, ‘সাধারণ মানুষ সাহাবা ও
তাবেয়ীনের যুগ থেকে আলিমদেরকে
‘ইস্তিফতা’ করে আসছেন এবং আলিমগণ
জওয়াব দিচ্ছেন। শরীয়তের হুকুম-আহকামের
ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ আলিমদের অনুসরণ
করতেন। এটি একটি ইজ্মায়ী
বিষয়।’ (ইহকামুল আহকাম, খ : ৪, পৃষ্ঠা : ৩৬৫)
শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (১১৭৪ হি.)
রাহ. লেখেন- ‘‘ ﺇﻥ ﺍﻹﺳﺘﻔﺘﺎﺀ ﻭﺍﻻﻓﺘﺎﺀ ﻟﻢ ﻳﺰﻝ ﺑﻴﻦ
ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻣﻦ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ’’ অর্থাৎ
ফতোয়া প্রার্থনা ও ফতোয়া প্রদানের
ধারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকেই মুসলমানদের
মধ্যে চলে আসছে। (ইকদুল জীদ, পৃষ্ঠা : ৬৯;
হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, খ: ১৫৬) (চলবে
ইনশাআল্লাহ)


সংগৃহীত মাসিক আল কাওসার 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্ট একটি শিশু জ্বলন্ত চুলার ভিতরে গিয়ে জ্বলন্ত কয়লা হাতে তুলে মুখে নেওয়ার সাথে সাথেই‌‌‍ স্বর্ণের টুকরায় পরিণত হলো।