আট মুক্তা

হাতেম রঃ এর আট মুক্তা

হযরত হাতেম রহঃ এর আটটি মাসআলাহ শিক্ষা।

হযরত হাতেম আছাম রঃ যিনি বিখ্যাত বুজুর্গ , এবং হযরত শাকীক বলখী রঃ এর খাাছ শাগরেদ ছিলেন। একবার তাহার উস্তাদ জিজ্ঞাসা করলেন যে, হে হাতেম! কতদিন ধরে আমার সাথে আছো? তিনি বললেন তেত্রিশ বসর যাবত। জিজ্ঞেস করিলেন এতদিনের মধ্যে তুমি কি শিখিলে আমার থেকে? হাতেম রঃ বলেন আমি মাত্র আটটি মাসআলাহ শিখেছি। শাকীক বলখী রঃ বলেন ইন্না লিল্লাহ এত দিনের মধ্যে মাত্র আটটি মাসআলাহ শিখলে, আমার জীবনটাই তো বরবাদ তোমাকে সময় দিয়ে। হাতেজ রঃ বলেন হুজুর! মিথ্যা তো আর বলতে পারি না সত্যি বলছি মাত্র আটটি মাসআলাহই শিখেছি। হযরত শাকীক বলখী রঃ বলেন আচ্ছা তাইলে এবার বলো কি আটটি মাসআলাহ যা তুমি শিখেছো।

হাতেম রঃ বলেন ———

* এক *

আমি দেখিলাম যে, মাখলুকের মধ্যে প্রত্যেকরই কারও না কারও সহিত মুহাব্বত রহিয়াছে স্ত্রী বিবি বাল বাচ্চা সন্তানাদি বন্ধু বান্ধব ইত্যাদির সাথে ভালবাসা স্থাপন হয়। কিন্তু আমি দেখলাম মৃত্যুর সময় সবাই পর হয় এজন্য আমি নেক আমল সমহর সাথে বন্ধুত্ব করিয়াছি যাতে মৃত্যর আগে সাথে থাকে ও পরও সাথে থাকে।

হযরত শাকীক বলখী রঃ বলেন ভাল করেছো

* দুই *

আমি আল্লাহ পাকের এরশাদ কুরআন পাকে দেখেছি واما من خاف مقام ربه الیة অর্থাৎ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আপন রবের সামনে ( আখেরাতে) দন্ডায়মানকে ণয় করিয়াছে এবং নফসকে (আরাম) খাহেশ হইতে বিরত রাখিয়াছে, তাহার ঠিকানা হবে জান্নাতে।(নাযিয়াত”৪০) আমি বিশ্বাস লইয়াছি যে, আল্লাহ তা’য়ালার এরশাদ সত্য। আর আমার নফসকে খাহেশাত হইতে অনবরত বিরত রাখিয়াছি। অবশেষে সে আল্লাহ তা’য়ালার অনুগত্যের উপর স্থির হইয়া গিয়াছি।

* তিন *

আমি দুনিয়কে দেখিয়াছি যে, প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট যে জিনিস বেশি মুল্যবান হয়, বেশি প্রিয় হয়, সে উহাকে বড় সাবধনতার সহিত উঠাইয়া রাখে ; উহার হেফাজত করে। অতপর আমি আল্লাহর এরশাদ দেখিলামঃ ما عندکم ینفد وما عند الله باق অর্থাৎ যাহা কিছু তোমাদের নিকট দুনিয়াতে আছে উহা শেষ হইয়া যাইবে (চাই উহা এমনিই নিঃশেষ হোক বা তোমার মৃত্যুবরণ কর — সর্বাবস্থায় উহয় শেষ হইয়া যাইবে)। আর যাহা আল্লাহ তা’য়ালার নিকট আছে উহা সবসময় বাকী থাকীবে। (নাহলঃ ৯৬) এই আয়াতের কারণে যদি কোন জিনিস আমার নিকট কখনও গুরুত্বপূর্ণ মনে হইয়াছে এবং আমার বেশি পছন্দ হইয়াছে, উহা আমি আল্লাহ তা’য়ালার নিকট পাঠাইয়া দিয়াছি। যাহাতে চিরদিনের জন্য উহা সংরক্ষিত হইয়া যাই।

* পাঁচ *

আমি লোকদেরকে দেখিয়াছি, তাহারা পরস্পর দোষারোপ করে, দোষ তালাশ করে, গালিগালাজ করে। আর এই সবকিছু হিংসার কারণে হয় বলিয়া একজনের প্রতি অপরজনের হিংসা হয়। আমি আল্লাহর এরশাদ দেখিতে পেলাম نحن قسمنا بینهم معیشتهم الایة অর্থাৎ, দুনিয়ার জীবনে তাহাদের রুজি আমিই বন্টন করিয়া রাখিয়াছি এবং এই বন্টনের মধ্যে আমি একজনকে আরেকজনের উপর শ্রেষ্টত্ব দিয়া রাখিয়াছি। যাহাতে একজন অপরজন দ্বারা কাজ লইতে থাকে যদি সকলে সমান এক বরাবর একই ধরনের হইয়া যায়, তবে একে অন্যের কাজ কেন করিবে কেন চাকুরি করিবে —-আর এই ভাবে দুনিয়ার শৃংখলা নষ্ট হইয়া যাইবে। (৩৩/যুখরুফ) আমি এই আয়াত শরীফের কারণে হিংসা করা ছাড়িয়া দিয়াছি। সমস্ত মাখলুক হইতে সম্পর্ক ছিন্ন করিয়া লইয়াছি এবং আমি বিশ্বাস করিয়া লইয়াছি যে, রুজি বন্টন একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি যাহার অংশে যে পরিমাণ ইচ্ছা দান করিবেন —- এইজন্য মানুষের প্রতি শত্রুতা ছাড়িয়া দিয়াছি। আর ইহা বুঝিয়া লইয়াছি যে, কাহারও নিকট সম্পদ বেশি অথবা কম হওয়ার ব্যাপারে তাহাদের কর্মের দখল নাই। ইহা তো আল্লাহর পক্ষ হইতে বন্টন হইয়াছে। এজন্য এখন কাহারো প্রতি গোস্বাই আসে না।

* ছয় *

আমি দুনিয়াতে দেখিয়াছি—– প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তির কাহারও না কাহারও সহিত ঝগড়া রহিয়াছে, কাহারও না কাহারও সহিত শত্রুতা রহিয়াছে। আমি চিন্তা করিলাম, তখন দেখিলাম যে, আল্লাহ তা’য়ালা বলিয়াছেনঃ ان الشیطان لکم عدو اتخذوه عدوا অর্থাৎ, শয়তান নিঃসন্দেহে তোমাদের দুশমন। (ফাতির:৬) সুতরাং আমি শত্রুতা করিবার জন্য তাহাকে নির্বাচন করিয়াছি, আর তাহার নিকট হইতে দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করি। কারণ, আল্লাহ যখন শয়তানকে শত্রু বলিয়া দিয়াছেন, তখন আমি তাহাকে ছাড়া অন্যদের প্রতি শত্রুতা বর্জন করিয়াছি।

* সাত *

আমি দেখিয়াছি যে, সমস্ত মাখলুক রুটি রোজগারের তালাশে লাগিয়া রহিয়াছে। উহারই কারণে নিজেকে অন্যদের সম্মুখে অপমানিত করে এবং নাযায়েজ পথ অবলম্বন করে। অতঃপর আমি দেখিলাম যে, আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ রহিয়াছেঃ وما من دابة فی الارض الابن علی الله رزقها অর্থাৎ,কোন প্রানী জমিনে বিচরণকারী এমন নাই, যাহারা আল্লাহর যিম্মায় না রহিয়াছে। (হূদ:৬) আমি দেখিলাম যে, আমিও জমিনের উপর বিচরণকারীদের মধ্যে হইতে একজন, যাহাদের রুজি আল্লাহর যিম্মায় রহিয়াছে। অতএব, আমি আমার সময়কে ঐ সমস্ত কাজে মশগুল করিয়া লইলাম,যাহা আল্লাহর পক্ষ হইতে আমার উপর জরুরী করা হইয়াছে। আর যে জিনিস আল্লাহর জিম্মায় ছিলো উহা হইতে আমি আমার সময়কে অবসর করিয়া লইলাম।

* আট *

আমি দেখিলাম যে, সমস্ত মাখলুকের আস্থা ও ভরসা এমন কোন বিশেষ জিনিসের উপর রহিয়াছে, যাহা নিজেই মাখলুক। কেহ নিজের সম্পত্তির উপর ভরসা করে, কেহ নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ভরসা করে, কেহ নিজের হাতের কাজের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ রাখিয়াছে, কেহ নিজের শরীরের স্বাস্থ এবং শক্তির উপর (অর্থাৎ যখন ইচ্ছা যেইভাবে ইচ্ছা কামাই করিয়া লইব)। আমি দেখিলাম—- আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেনঃ- ومن یتوکل علی الله فهو حسبه অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তাহার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।(তালাক:-৩) এইজন্য আমি একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা ও তাওয়াক্কুল করিয়া লইয়াছি।

হযরত শাকীক বলখী রঃ বলেন, হে হাতেম! আল্লাহ তা’য়ালা তোমাকে তাওফিক দান করুন। আমি তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর, ও কুরআনের এলেম সমূহ দেখিয়াছি—- সমস্ত ভাল ও কল্যাণের কাজ এই আটটি মাসআলার মধ্যেই পাইয়াছি। অতএব, যে ব্যক্তি এই আটটি বিষয়ের উপর আমল করিয়া লইবে, সে যেন আল্লাহর চারটি কিতাবের উপর আমল করিয়া লইল। এই ধরনের এলেম আখেরাতের ওলামায়ে কিরামই পাইতে পারেন। দুনিয়াবী আলেম তো সম্পদ ও সম্মান হাসিল করিবার মধ্যেই লাগুয়া থাকে।

(ফাজালে সদাকাত ২য় ১৩৮ পৃঃ)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্ট একটি শিশু জ্বলন্ত চুলার ভিতরে গিয়ে জ্বলন্ত কয়লা হাতে তুলে মুখে নেওয়ার সাথে সাথেই‌‌‍ স্বর্ণের টুকরায় পরিণত হলো।